Saidur Trainer 2 years ago |
পেঁপে স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণ উপকারী ফল। পেঁপে কাঁচা হোক কিংবা পাকা দুটোতেই রয়েছে অনেক পুষ্টি। পুষ্টিবিদরা পেঁপেকে ‘মহৌষধ’ বলে মনে করেন।
শিশুদের প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে, বয়স্কদের অর্শের সমস্যা কমানোর জন্য ডায়েটে সবার আগে এই ফল রাখার কথা বলা হয়।
বিভিন্ন ভিটামিন এবং খনিজের প্রাকৃতিক উৎস পাকা পেঁপে চোখের জন্যও উপকারী। বিটা ক্যারোটিনে ভরপুর পাকা পেঁপে ত্বকের স্বাস্থ্যরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ওজন ঝরানোর ডায়েটেও ফল রাখার কথা বলেন পুষ্টিবিদরা।
পেঁপের মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার। এ ছাড়াও পেঁপের মধ্যে থাকে ভিটামিন সি, এ, বি, ই, প্রোটিন, খনিজের প্রাকৃতিক উৎস, বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ক্যারোটিনয়েড, ফাইবার, পটাশিয়াম। পেঁপের মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণ লিউটিন। যা মানবদেহের জন্য খুব উপকারী।
প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা পেঁপেতে ৭.২ গ্রাম শর্করা, ৩২ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি, ০.৮ গ্রাম আঁশ, ০.৬ গ্রাম আমিষ, ০.৫ গ্রাম খনিজ পদার্থ, ৬.০ মিলিগ্রাম সোডিয়াম, ৬৯ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম ও ০.৫ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে। এ ছাড়া এতে কিছু পরিমাণে ভিটামিন ই, বিটাক্যারটিন ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকে যা শরীর ও ত্বক ভালো রাখতে সাহায্য করে। পেঁপের মধ্যে ক্যালোরি থাকে মাত্র ৫৯। এ ছাড়াও কার্বোহাইড্রেট থাকে ১৫ গ্রাম, ফাইবার ৩ গ্রাম, থাকে ভিটামিন এ, সি। এতে থাকে লাইকোপোপেন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরের জন্য খুবই ভালো। সেই সঙ্গে পেশিও শিথিল হয়।
পেঁপের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম। ৬০-এর মধ্যে। যে কারণে সুগারের রোগীদের নিয়ম করে পেঁপে খাওয়ার কথা বলা হয়। প্যাপাইন এই এনজাইমটি অ্যালার্জি থেকে শুরু করে ক্ষত সারানোর মতো কাজ করতে পারে।
ক্যানসার প্রতিরোধ করে: ভিটামিন সি এবং অ্যান্টি অক্সিড্যান্টে ভরপুর পাকা পেঁপে ক্যানসারের মতো দুরারোগ্য ব্যাধি প্রতিরোধ করে। এ ছাড়াও পেঁপেতে থাকা ক্যারোটিনয়েড, ভিটামিন সি এবং ই, ত্বকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
হজমে সহায়ক: পেঁপে মুখের রুচি ফেরায়। সেই সঙ্গে খিদেও বাড়ায় এবং পেট পরিষ্কার রাখে। পেট পরিষ্কার থাকলে গ্যাসের সমস্যাও নিয়ন্ত্রণে থাকে। শুধু তাই নয়, যাদের পাইলসের সমস্যা রয়েছে, চিকিৎসকরা তাদের পেঁপে খাওয়ার পরামর্শ দেন।
চোখ ভালো রাখে: অপথ্যালমোলজি আর্কাইভস প্রকাশিত একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, প্রতিদিন তিনবার পেঁপে খেলে চোখের বয়সজনিত ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়। বয়স্কদের মধ্যে দৃষ্টি ক্ষতি প্রাথমিক কারণ, প্রতিদিনের খাবারে তলনামূলক ভাবে কম পুষ্টি গ্রহণ করা। পেঁপে আপনার চোখের জন্য ভালো, এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন এ, সি, ও ই এর উপস্থিতির কারণে।
প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়: পেপে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ১০০ শতাংশ ভিটামিন সি পাওয়া যায় পাকা পেঁপে থেকে। শরীরে কোনো সংক্রমণ হলে, তা কমাতে চিকিৎসকরা পাকা পেঁপে খাওয়ার পরামর্শ দেন।
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে: পেঁপেতে কোনো ক্যালোরি নেই। আছে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার। তাই যারা কোলেস্টেরলের সমস্যায় ভুগছেন তারা খুব ভালো ফল পাবেন যদি প্রতিদিন একবাটি করে পাকা পেঁপে খেতে পারেন।
ওজন কমায়: পাকা পেঁপেতে যথেষ্ট পরিমাণ ফাইবার থাকায় তা অন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষা করে। পাশাপাশি বিপাকহারও বাড়িয়ে তোলে। এ ছাড়াও যারা ওজন কমাতে ডায়েট মেনে খাবার খেয়ে থাকেন, তাদের জন্যও ভালো পাকা পেঁপে।
পিরিয়ডের সমস্যা দূর করে: প্রতিদিন পেঁপে খেলে ইউটেরাসের পেশি ভালো করে কাজ করে। আর পেঁপের মধ্যে থাকা ক্যারোটিন শরীরে তাপ উৎপন্ন করে। এই দুই এর প্রভাবে ইস্ট্রোজেনের ক্ষরণ ভালো হয়। প্রাকৃতিকভাবে শরীরে ইস্ট্রোজেন উৎপন্ন হলে পিরিয়ডসের সমস্যা অনেকটাই মিটে যায় এবং ধারাবাহিকতাও বজায় থাকে।
হৃৎপিণ্ড ভালো রাখে: হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পটাশিয়াম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদ্রোগ সংক্রান্ত যাবতীয় সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করে এই যৌগ। প্রাকৃতিকভাবে পটাশিয়ামের উৎস হলো পাকা পেঁপে। এছাড়া পেঁপেতে থাকে লাইকোপোপোন ও ভিটামিন সি। যা আমাদের হার্টের জন্য বেশ ভালো। যা আমাদের খারাপ কোলেস্টেরলের হাত থেকে রক্ষা করে। যার ফলে হার্ট ভালো থাকে এবং রক্তসঞ্চালন ভালো হয়। এ ছাড়া শরীরের যে কোনো রকম জ্বালা, প্রদাহ কমাতেও ভালো কাজ করে পেঁপে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে: পেঁপে খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়— এই ধারণা ভুল। পেঁপের ‘গ্লাইসেমিক ইনডেক্স’ বা জিআই-এর মান অনেকটাই কম। তাই পরিমিত মাত্রায় ডায়াবেটিক রোগীরা নিজেদের ডায়েটে পাকা পেঁপে রাখতেই পারেন। পেঁপের মধ্যে সুগারের পরিমাণ খুবই কম থাকে। প্রতি এক কাপ পেঁপেতে ৮ দশমিক ৩ গ্রাম মিষ্টি থাকে। তাছাড়াও গবেষণায় দেখা গেছে, পেঁপে টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোধ করতে দারুণভাবে সাহায্য করে। এতে থাকা ‘পাপাইন' নামক এনজাইম শরীরকে ভেতর থেকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। গবেষণায় দেখা গেছে, পেঁপেতে থাকা নানা পুষ্টি উপাদান টাইপ ওয়ান এবং টাইপ টু ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে।
চুলের জন্যও উপকারী: চুলের জন্যও পেঁপে খুব উপকারী। যে কারণে পেঁপে মেশানো শ্যাম্পুর প্রচলন বেশি। এ ছাড়া টক দইয়ের সঙ্গে পেঁপে মিশিয়ে চুলে মাখলে গোড়া শক্ত হয়। চুলের শাইনিং ভাব বজায় থাকে। এ ছাড়া মাথায় উকুনের সমস্যা হলে পেঁপে ভালো কাজ করে।
Alert message goes here